ইচ্ছামৃত্যু

চেয়ারে বসে দিনগুলো বেশ কাটছিল৷ সারাদিনের ঝণ্ডাধারি সমাজের থেকে অনেক দূরে বসে নিজের মৃত্যুর ছন্দ গড়ি.সমাজ কে ত্যাগ করেছি ছেলের মৃত্যুর পর থেকে৷  নিজের বলতে তো আজ এই চেয়ার আর সামনে পড়ে থাকা সিগারেটের প্যাকেট৷ পোড়া দেওয়ালের ফাটল দিয়ে ভেসে আসছে "চলছে চলবে"এর শব্দে৷ যখন পিচের ওপরে চাকা ঘষার শব্দটা যখন খুব একঘেয়ে লাগে তখন ছন্দ পরিবর্তনের জন্য টিনের চালে বৃষ্টির আশ্রয় নিয়ে ফেলি৷ সকালে ঝর্ণার মায়ের রান্নাতেই দিনের পর দিন পেরিয়ে এলাম৷ কতদিন দেখিনি রাস্তায় জমা জলের মুখ৷ জানো ছোট্টবেলা ওই জমা জলেই দাপিয়ে কতো অকাল জ্বরের আগমন ঘটিয়েছি?
সব দেখোছি জীবনে তাই হয়তো আজ বুকে জমে এত বিতৃষ্ণা৷ না আছে আপন না পর,আছে বলতে শুধু কাছের মানুষের আচ্ছন্নতা৷ মনটা আজ বছর চারেক প্যারালাইসিসে আক্রান্ত৷ ভাবনার শক্তিকে গ্রাস করেছে বিষাদের অভয়ারণ্য আর বেঁচে থাকাকে?
তাকে তো সেই কবে হত্যা করেছে অবসরপ্রাপ্ত পঙ্গু জীবন৷ পা টা খুইয়েছিলাম অফিসের সিড়ির বিশ্বাসঘাতকতায়৷ হাতদুটো সারাদিন ব্যস্ত দেশলাই জ্বালানোর খেলায়৷ খুব ইচ্ছে ছিল মুখাগ্নিটা ছেলেই করবে আমার.কিন্তু সেটাই বা হলো কই? তাই আজকাল সাময়িক মুখাগ্নি নিজের নিজেই করি৷
বাঁচবার ইচ্ছে ও শক্তি দুটোই হারিয়েছে ধর্মতলার ট্র্যাফিকের  মাঝে৷  মস্তিস্কে আজ পর্যন্ত কোনও আঘাত পাইনি সেটা আগেই বলে রাখা টা জরুরী৷ কারণ আমার জীবনের লক্ষ একটাই৷ নিজের প্রাণ ত্যাগ করা৷ শুনে মনে হচ্ছে তো,এ কিরম লোক রে বাবা? কিসের এত মরবার সখ?জীবনে কীসের এত বিষাদ?
সত্যি বলতে আমি মেন্টালি এখনো ঠিকঠাক আর জীবনে হাজার বিষাদের কারণ ঘটেছে বটে তবে সেগুলিকে প্রাণত্যাগের ইচ্ছের জন্মদাতা নয়৷ আসলে যতটা বাঁচবার ছিল সবটা বেঁচে নিয়েছি৷ আর বিশেষ করে বাঁচবার ইচ্ছেটা হারিয়ে ফেলেছি৷ তবে কাপুরুষ নামক স্মৃতি হয়ে থেকে যেতে চাইনা এ সমাজে তাই সুইসাইডের চিন্তাকেও ত্যাগ করেছি৷ শুনেছিলাম ইচ্ছামৃত্যুটা ভারতে অসামাজিক৷ যেখানে জন্ম নিয়েছিল ভীষ্ম,যেখান থেকে এ ইচ্ছামৃত্যুর পুঁথিকরন সেখানেই আজ সেটি অসামাজিক৷ জানো খুব ভোরে আমি দেখি নিজের মৃত্যুর নাটক৷ রোজ সেটিতে যোগ করি নতুন দৃশ্য আর বাড়িয়ে তুলি মৃত্যুর প্রতি রোমেন্টিকতা৷ কিন্তু তারপর চোখ খুললেই ফিরে আসি তোমার সমাজে যাকে আজ পর্যন্ত দেখার বা বোঝার সৌভাগ্য ঘটেনি৷  তবে দেখার যে খুব ইচ্ছে ছিল কখনো সেটাও নয়৷  শুধু দেখা হলে প্রশ্ন থাকবে একটাই,
" ইচ্ছামৃত্যু কি ভুল ছিল? নাকি অকারণে বেঁচে থাকাকে আপনি সামাজিক বলে ভাবেন?"
তারপর বিষ হাতে মনে হলো ,"ধুত্তোর সমাজ"

No comments:

Post a Comment