স্বাধীনতা দিবস।।।

সকালে খবরের কাগজ হাতে চায়ের কাপটি পাশে রেখে হাসলাম,
       আজ যে স্বাধীনতা দিবস।
আকাশে সকাল থেকে কালো মেঘেদের ভিড়। তারা আজ গজরাচ্ছে কোনও অজানা প্রশ্নের উত্তরের আশায়৷ টিভির সামনে মানুষেরা জমাট বেধেঁছে। তারা লাল কেল্লায় পতাকা তোলা দেখতে ব্যস্ত।স্কুল কলেজ অফিস কাছারি সব ছুটি আজ।সব বাড়িতে রান্নাবান্নার ধুম লেগেছে, কর্তা যে আজ বাড়িতে৷ কাগজের থেকে মনটা হঠাৎ সরে গেল রাস্তায় যেখানে হারুর চায়ের দোকানে চলছে স্বাধীনতা নিয়ে তর্কাতর্কি৷ কোনও এক কন্ঠে ভেসে এলো "দেশ নয় স্বাধীন হয়েছে কিন্তু মানুষ কি স্বাধীন হতে পেরেছে? আর দেশ ই বা স্বাধীন হল কই এ যে শুধু রাজনৈতিক সিংহাসনের রদবদল..."
কথাটি নিতান্ত তর্কাতর্কির রূপে বেরিয়ে আসা বাকি কথাগুলির সমতুল্য হলেও কথাটির নিজস্ব ভার ছিল৷ আর সেই ভারটি কতটা শক্তিশালী সেটা বুঝিয়ে দিলে খবরের কাগজের পরের পাতার হেডলাইনস গুলো৷
"দুই রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষে নিহত ৫  যুবক"
"বোমাবাজিতে মৃত স্কুলমাস্টার"
"রাজ্যে দুর্নীতি রুখতে ছাত্রদের মিছিল ও তাতে পুলিশের লাঠিচার্জ"
"অনাবৃষ্টিতে ফসল উৎপাদনে ঘাটতির কারণে চাষীদের আত্মহত্যা" ৷
আজও তো সাম্প্রদায়িকতার রেষ কাটেনি এ দেশের মানুষের মন থেকে৷ আজও তারা মিলে যেতে পারেনি একে অপরের সাথে৷ ৬৯ বছর পরও আজ মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাদের দমানোর চেষ্টায় ব্যস্ত প্রশাসন৷ আজও চাষীরা তথা স্বাধীন দেশের অন্নদাতারা তাদের দুর্দিনে প্রশাসনিক সাহায্যের অভাবে স্বেচ্ছায় প্রান হারায়৷ এবার একটু ইতস্ততবোধ হলো মানুষকে স্বাধীন ভাবতে৷ স্বাধীনতা মানে যদি ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্তি হয় তাহলে আমরা আজ স্বাধীন তবে যদি মানুষের ভাবনায়, চিন্তায়, কথায় ,জীবনের পথ চলায় স্বাধীনতা খোঁজা যায় তাহলে তাকে মেলা ভার৷ স্টেজে উঠে আজও রাজনৈতিক নেতা রূপে শাসক দল আমাদের মিথ্যাচারের জালে ফাঁসিয়ে আমাদের ওপর শাসন চালাচ্ছে। মিল পাচ্ছ কারোর সাথে?
তবুও আজ দেশবাসী ব্যস্ত স্বাধীনতা দিবস পালনে৷ দুপুরে বিছানাতে শুয়ে মনে হলো এই তো দিব্যি স্বাধীন...কে বলেছে স্বাধীনতার অভাব এ স্বাধীন দেশে?... হঠাৎ মনে পড়ে গেল রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কিছু লাইন...
"স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,
কে বাঁচিতে চায়?
দাসত্ব-শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,
কে পরিবে পায় |
কোটিকল্প দাস থাকা নরকের প্রায় হে,নরকের প্রায়!"
তখন মনে হলো স্বাধীনতা তো আজ মিলেছে...তবুও কেন মানুষ আজ রাজনৈতিক শক্তির কোটিকল্প দাস...তারপর আবার ভাবতে বাধ্য হলাম স্বাধীনতা তো দেশের,মানুষের নয়।দেশ স্বাধীনর ৬৯ বছর পরও আজ আমরা পরাধীন...কখনও সমাজের আর্থিকবল অধিকারিদের হাতে কখনও বা রাজনৈতিক প্রশাসনের কেলেঙ্কারির হাতে আবার কখনও নিজেদের মধ্যে ধর্ম নামে একটি দুর্গন্ধময় ফুলের রূপে আকৃষ্ট হয়ে৷
টিভিতে বিকেলবেলা দেখলাম কাশ্মীরেও তোরজোর করে পালন হয়েছে "ভারত"এর স্বাধীনতা দিবস৷ তবে এবার একটু কষ্টই হলো কাশ্মীরিদের কথা ভেবে৷ শুধু নিজেদের কথা ভাবাটা স্বার্থপরতা হবে...তাই unbiased সেন্সে দেখলে তারা আজ পরাধীন৷ তারা পরাধীন ভারত পাকিস্তান গুলি বোমার মধ্যে৷ তারা আলাদা হতে চেয়েছিল৷ তারা মাথা তুলে বাঁচতে চেয়েছিল৷ সারা মিলেছে তাদের চাওয়া গুলোর তবে বারুদের গন্ধরূপে৷ মাথা তুলতে চেয়েছে শত শত যুবক তবে তাদের যে  আজ দেশদ্রোহী বলে সম্মানিত করেছে রাজনৈতিক সমাজ৷ আমার স্বাধীন দেশের এই দুর্দশা আমায় ভাবায়। ভাবায় উত্তরে মাথা হেট করে থাকা মানুষেরা।স্বাধীন "ভারত" আজ কেন AFSPAর দ্বারা নিজেরই স্বাধীন রাজ্য গুলোকে শাসন করছে , তার উত্তর পাওয়া যায়নি । যদি এই AFSPA নিয়োগের কারণ স্রেফ সুশাসন বজায় রাখা তাহলে আজ প্রশাসন ব্যর্থ। তবে যদি কারণটি সাধারণ মানুষদের দমিয়ে রাখা হয় তাহলেও তারা কিছুটা সফল। পুরোপুরি সফল না কারণ সেখানেও আজ মানুষ ঘুরে দাড়িয়েছে। কেন এ " স্বাধীন ভারতে" তাদের স্বাধীনতার দাম নেই?
স্বাধীনতা দিবসটা আপেক্ষিক লাগে । পরাধীনতার অভিশাপে যে দেশ তার হাজারও সন্তান খুইয়েছিল...সেই দেশ আজ তার রাজ্যের পরাধীনতার কারন। স্বাধীনতা সেদিন হারিয়েছিল যেদিন অখন্ড ভারত থেকে ভারত পাকিস্তান তথা আরও খন্ডে বিভক্ত হয়েছিল৷ পাশের বাড়ির ছেলেটিকে যেদিন ধর্মের নামে দেশ ছাড়তে হয়েছিল সেদিনই হারিয়ে গিয়েছিল স্বাধীনতা। আজ যে শুধু স্বাধীনতা দিবস নয় । আজ হলো তারকাঁটার বেড়ার ওপারে আপন মানুষগুলির কথা মনে করবার দিন৷ সেদিন দেশ স্বাধীন হলেও দেশের মানুষ হারিয়েছিল তাদের নিজেদের মানুষদের৷
২০১৬ সালে বসে এটা বলা যায় যে মানুষ আধুনিক হয়েছে...তার চলন-বলন বদলেছে তবে স্বাধীন আজও পুরোপুরি হতে পারেনি।
কোথায় যেন একটা আজও ভয় কাজ করে এগিয়ে যাওয়ার পথে৷ আজ নারীরা শিক্ষিত তবে তারা সুরক্ষিত নয়৷  আজ ছাত্রসমাজ জলন্ত নতুনের আশায়, তবে তারা হারিয়ে যাচ্ছে রাজনীতির পাঁকে৷ দলিত শ্রেণি আজও অত্যাচারিত। রোহিত ভেমুলার মতো মেধা আজ ঝুলচ্ছে দেওয়ালের ফোটো ফ্রেমে। এটা জাতি বিদ্বেষী হত্যা যার জন্য দায়ি এ "স্বাধীন" দেশের সমাজ ব্যবস্থা।২০০০ বছর যারা জ্ঞান চর্চার অধিকার থেকে বঞ্চিত , তাদের ওপর প্রভাবশালী শিক্ষিত সমাজের প্রাণহীন জীবেরা। ভোটের রাজনীতি আর কাস্টিসমের হাতে আজ মৃত পিছিয়ে পরা সম্প্রদায় গুলোর স্বাধীনতা। Reservation টা কেবল আজ শাঁক দিয়ে মাছ ঢাকা দেওয়ার উপায়।  হিন্দু মুসলমান আজও লড়াই করে রোজ নিহতদের তালিকায় নাম লেখায়। রাজনৈতিক শক্তি আজও মানুষের বলি চায়। প্রতিটি রাজ্যে আজ সন্ত্রাসে প্রাণ হারাচ্ছে শত শত মানুষ......সন্ত্রাস মুক্ত সমাজ আজ ও কেবল রূপকথার গল্প।

তবে তাও আজ "আমরা স্বাধীন " বলে কতো আওয়াজ ভেসে আসে কানে।
স্বাধীনতা পেয়েছে তো... তবে আমরা নয়, স্বাধীনতা পেয়েছে দেশ৷ দেশবাসীদের স্বাধীনতা আজও দুর্লভ । ভাবনা চিন্তা মাথা তুলে প্রতিবাদের স্বাধীনতা আজও মৃত। স্বাধীনতা দিবসটা আজ কেবল ছুটির দিন...

বাইরে বৃষ্টি নেমেছে ,...জানলা দিয়ে দেখলাম ৷ মনে হলো শহীদের দল আজ তাদের স্বাধীন দেশের অবস্থা দেখে মর্মাহত।তাদের চোখের জলে আজ ভেসে যাচ্ছে রাস্তার ধুলো আবার হয়তো মানুষের মনে জাগাতে চাইছে সঠিক স্বাধীনতার মর্ম ও মানে।
সন্ধ্যার অন্ধকারে কোথা থেকে হঠাৎ ভেসে এলো গম্ভীর কন্ঠে,
" Long years ago we made a tryst with destiny, and now that time comes when we shall redeem our pledge, not wholly or in full measure, but very substantially. At the stroke of today's midnight hour, when the world sleeps, India will awake to life and freedom...."
দেশ নয় স্বাধীন হল ...এবার দেশবাসীদের নিজেদের স্বাধীনতা খোঁজার পালা ।।

2 comments:

  1. I loved your last para . But it also reminds me of worlds largest imigration, as our beautiful nation splits up in the name of caste and religion . Long ago british rule sowed some dangerous differing thoughts and still it fruits . Tine to cut it off from the soil

    ReplyDelete
  2. I loved your last para . But it also reminds me of worlds largest imigration, as our beautiful nation splits up in the name of caste and religion . Long ago british rule sowed some dangerous differing thoughts and still it fruits . Tine to cut it off from the soil

    ReplyDelete