চাহনিতে প্রেম

বৃষ্টি পড়ছে ছিটেফোঁটা,সবে কলেজ ছুটি হলো। বাইরের আকাশটাকে দেখে মনে হলো আজ কালো পতাকা উড়িয়ে মেঘের দল কিসের প্রতিবাদে ব্যস্ত।বাড়ি ফেরার খুব একটা তাড়া নেই। সত্যি বলতে কোনও দিনই থাকে না সে তাড়া। সেমেস্টারের শুরু তাই পড়াশুনার চাপটাও বলতে গেলে নেই। তবু পেটের খিদেটা অনর্গল বাড়ি ফেরার চিন্তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। দাড়িয়ে না থেকে সোজা বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই দৌড়লাম সামনের মোড়ের দিকে। চটজলদি বাস ও পেয়ে গেলাম। সোজা উঠেই সিটের খোঁজে চোখ পড়ল শেষের কোনের সিটটার দিকে। জানলার ধারের লোভে ,সোজা ওটিতে গিয়ে বসলাম। বসতে না বসতেই বাসটি আবার দাড়ালো। দেখলাম ফাঁকা বাসটা নিমেষে ভরে উঠলো।
               আর দেখলাম তাকে......
                                              সেদিন তার পরনে লাল চুড়িদার। বৃষ্টির ভয়ে তার চুলটাও বাঁধা আজ। না, আমি আগে কখনও  দেখিনি তাকে। তবে দেখে মন বললে "এরই ছবি আঁকবার চেষ্টায় তুমি নষ্ট করেছ কত বইয়ের শেষ পাতা। কত দিন ক্লাসের বাইরে কান ধরতে হয়েছে এই রূপকথার শান্তিমূর্তির রূপ প্রতিষ্ঠার দোষে।" তাই আজ তাকে এত চেনা লাগছে।  আড়চোখে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। সে বাসে উঠে বসল সামনের আড়াআড়ি করা একটা সিটে। বাসটা আবার চলতে লাগল। তবে আমার চোখের  পলকগুলো তখনও স্থির। চোখ দুটো যেন খুঁজে পেল চেয়ে থাকার ঠিকানা। কোনও এক অজানা অচেনা রাস্তায় হঠাৎ পা রাখতে চাইল মন।
            মনে মনে তার অজানা নামের ঠিকানায় চিঠি লিখলাম, " কে তুমি? জানো রোজ তোমার জন্য আমায় কান ধরতে হয়েছে। ভেবেছিলাম তুমি বইয়ের শেষ পাতাতেই থেকে যাবে চিরকাল। আচ্ছা তবে এরকম খনিকের দেখা কেন? "
সে তার চোখের চাহনি দিয়ে বললে, " আমায় নয় বেনামেই মনে রাখলে।মনের দুয়ারে কি নাম না জানা লোকেরা স্থান পায়ে না? " । ভুরুটি কুঁচকে সে যেন আরও বললে, "ক্লাস ফাঁকি দেওয়ার কারণ তাহলে আজ আমি? "......
হঠাৎ তখন বাসের ঝাঁকুনিতে দেখলাম বাস কন্টাক্টার অনেকবার টিকিটের দাম চেয়ে ও সে চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে রেগে লাল। পুরো বাস ভরতি লোক তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এবার বুঝলাম "তার ভুরু কুঁচকে" আমার দিকে তাকানোর কারণ। তবে মন বাস্তবটিকে অবহেলা করতে চাইল।
                  তারপর বেশ কিছুক্ষণ বাদে সে আবার তাকাল। যদিও আমার চোখ এক মুহূর্তের জন্যও তাকে হারায়েনি। চোখে চোখে সে যেন বললে, " কি এত ভাবচ্ছো? এ তো খনিকের প্রেম... এত কি প্রশ্ন লুকিয়ে তোমার আড়চোখে তাকানোর ভিতরে? "
আমি বললাম,"চোখের পলকে যে ভালো লাগা জন্ম নেয় সে কি আজও অবৈধ স্মৃতির পাতায় বেচে থাকে শুধু?"
জবাব পেলাম," ধুর পাগল,আমায় দেখে এত বাংলা আওরানোর কিছু হয়নি...এরকম কত ভালবাসা আসবে যাবে...তবে পারলে তোমার ক্লান্ত ক্লান্ত ঠোঁটের মাঝে হালকা মুচকি হাসির স্মৃতি করে রেখো আমায়"
                  মনের কথোপকথনের ফাঁকে হঠাৎ বাসটা থামল। তারপর সে উধাও...আবার কেমন পেটের খিদেটা চাগাড় দিয়ে উঠলো। তবে মনে মনে বললাম ...হয়তো বা কোনও এক ছেঁড়া অবহেলিত পাতার উদ্দেশে ..." কি অদ্ভুত ছিল এ ভাল লাগা। কোনও চাওয়া পাওয়ার আশা নেই,কোনও মনোমালিনতা নেই...ছিল কিছু ডায়রির পাতায় তুলে রাখার মতো স্মৃতি শুধু..."
          খিদেটা তারপর গ্রাস করল সব চিন্তাভাবনা গুলোকে। বিছানায় শুয়ে অনেক রাতে সে স্মৃতিগুলো খুব হাসায়...আর দূর কোথাও থেকে আবছা সুরে ভেসে আসে...
" ভিজছে কাক আয়না থাক দেখুক
তোমায় ফুলের দল...
পথের বাঁক আনতে যাক বৃষ্টি ধোয়া
কলসি জল...
শহরতলি জুড়ে গলির মোড়ে মোড়ে
তোমায় নিয়ে নিয়ে গল্প হোক...."

No comments:

Post a Comment