ডায়রি...

"মধ্যবিত্ত জীবনের চাওয়া পাওয়া বলতে ভাল চালের ভাত আর মাথার ওপর হাই স্পিড ইলেকট্রিক পাখা৷ সকালবেলাটা কাটে বাজারের ফর্দ বানানোতে আর বাকি দিনটা হিসাব মেলানোতে৷ হাজার হোক খেটে ইনকাম করা পয়সা,হিসাব তো রাখা চাই৷ তবে টিভিটা কিন্তু সব কিছুর সাথে ইনক্লুডেড ৷ আসলে সিরিয়ালের নেশা আছে বউয়ের আর আমার খবরের চ্যানেল গুলোতে ঢু মারার স্বভাব অবসর সময়তে৷ তবে অবসর সময়টা প্রায় খুব কম বললেই চলে৷ নাহ চাকরি-বাকরি করি না আর, তবে বউয়ের সিরিয়ালগুলো যে শেষ হওয়ার নামই নেয় না, তাই আমার অবসর সময়ও আসে না৷ সারাদিন ডায়রি হাতে নিয়ে বাজার-মুদিখানার হিসাব করতে থাকি৷ বেশ ভালই এগচ্ছে জীবন৷ সেদিন বিকেল থেকে মনে সখ জেগেছিল বউকে নিয়ে বাইরে খেতে যাব৷ তাই দেরি না করে আজ রাতের ডিনারের প্ল্যান করলাম৷ ছেলে থাকে বিলেতে,এখানে রয়ে গেছি বলতে শুধু দুই বুড়ো-বুড়ি ই৷ ডিনারের ইচ্ছে টা বুড়ো বয়সের ভীমরতিই বলা যেতে পারে৷ বৃদ্ধ বয়সের ভালবাসাটাও জানো খুব সৌখিন হয়৷ এই তো বেলা শেষ,জানি না আবার কোন জন্মে দেখা হবে৷ তাই হারিয়ে ফেলার আগে বারুক না একটু টান,বাড়ুক একটু ঘনিষ্ঠতা৷ আমায় হারিয়ে নালে সে আমায় খুঁজে পাবেই বা কি করে? পূরনো স্মৃতিগুলো দিয়ে তাকে কাঁদাতে চাইনা তাই নতুন স্মৃতি গড়বার চেষ্টায়...."
ডায়রির পাতাটা উলটে গেল৷
এরপর শুধু শূন্যতা৷ বৃদ্ধার চোখে জল আর মনে আছড়ে পড়ছে অজস্র কালবৈশাখী৷ সেদিন বউয়ের জন্য সারপ্রাইস প্ল্যান করে সে গিয়েছিল ফুলের দোকানে৷ বউয়ের যে ফুলের সখ৷ ফেরার পথে লরির ধাক্কায় মৃত্যু৷
জীবনটা তার সাথে প্রতারণা করলেও তার ভাবনা চিন্তায় কিন্তু এক ফোটাও বেইমানি ছিল না ৷
বাইরের বৃষ্টিটা বেশ বেড়েছে৷ বৃদ্ধা তখন ডায়রিটা বন্ধ করে চোখের জল মুছবে মুছবে করছে, জানলা দরজা বন্ধ করতে হবে যে৷ তখন এক দমকা হাওয়ায় ডায়রিটা আবার খুলে গেল৷ অন্ধকারে তার চোখের সামনে ভেসে উঠল ডায়রির খুলে যাওয়া পাতায় লেখা একটি লাইন,
"আর একশ বছর আমি বাঁচবোই,হোক না এ পথ-ঘাট ফাঁকা"
বৃদ্ধার চোখের জল যেন বাইরের বৃষ্টিকেও হার মানাল৷

No comments:

Post a Comment