অসহিষ্ণুতা...

ভরদুপুরে রেল লাইনের ওপর পড়ে থাকা কালো ফ্রেমের একটি চশমা৷ কাঁচ দুটি ঘোলাটে হয়ে গিয়েছে ঐতিহাসিক স্তব্ধতার কারণে, প্রতিবাদের ভাষা যে আজ মেরুদণ্ডহীন৷ একটু এগিয়ে,পাথরের ওপর জমাট বাধা লাল রক্তের চাক, হয়তো এ রক্ত কোনো এক প্রতিবাদির দেহের অলংকার৷ তার দেহ থেকে চুঁইয়ে পড়া রক্ত কীসের বেশ জয়ধ্বনি বয়ে নিয়ে চলেছে৷ জয়ধ্বনি মানুষের বদলের, জয়ধ্বনি পালটা চোখ তুলে তাকানোর, জয়ধ্বনি রক্তের বিনিময় প্রাণ উৎসর্গের৷
             অত্যাচারির নাম যখন সমাজ হয়,তখন সংশোধনের পথে সব চাইতে বড়ো কাঁটা হয়ে দাড়ায় তার অধীনে থাকা মানুষ৷ বদল যে এ পৃথিবীতে কখনো রক্তের অপচয় ছাড়া সম্ভব হয়নি৷ প্রতিটি বদলের ইতিহাস যে মানুষের রক্তে লেখা,লেখা সহস্র মানবহৃদয়ের স্থগিত অশ্রুজলের মূল্যে৷
আচ্ছা সমাজ বলতে কাকে বোঝো?...
তোমার পরিবারের প্রিয়জনের শ্রাদ্ধে যারা পেট পুরে খেতে আসে নাকি যারা তোমার বিপদে তোমায় আড়চোখে অবগ্যা করে?
সমাজের গলায় যে শুধু শুনতে পাই ,"দাদা আর একটা মাছ দেবেন এখানে"  আর "এখন একটু তাড়া আছে".. এর থেকে সহজভাবে সমাজের বর্ণনা বোধহয় দেওয়া সম্ভব না৷
রক্তের চাকের দু হাত দূরেই পরে রয়েছে রক্তের মালিকের দেহ৷ উবুর হয়ে পরে রয়েছে নরদেহটি, পীঠে গুলিবিদ্ধ ক্ষত৷ পরনের সাদা ফতুয়ার রঙ বদল ঘটেছে৷ বদল ঘটেছে মৃত্যু লগ্নের৷ তার যে জন্মানোর অধিকারই ছিল না, তবু কেন এ জন্ম? এ পৃথিবী যে পরিবর্তন মানে না, মানে না সাম্যের তীক্ষ্ণতা৷ সাম্য যে লোকগাথা,সাম্য যে মিথ্যা ছলচাতুরি এ সমাজের ৷
সাম্য আজ মৃত, তার মৃতদেহের ভারে আজ ভারাক্রান্ত এই রেল লাইনে পড়ে থাকা মৃতদেহ৷
ছেলেটি যে দলিত, সাম্য তো ওদের জন্য নয়৷ সাম্য এ সমাজের অলংকার, হ্যাঁ অলংকারই বটে৷ বছরে দু একবার যেটি বের করে পড়া হয়ে৷ দলিতশ্রেনীর ক্ষমতা কোথায় এ সাম্য অলংকৃত সমাজের ভাগীদার হওয়ার, তারা যে কেবল উৎবাস্তু এ সমাজে৷ তবে সমাজের ন্যায় বড্ড কঠিন যে,তাই আজ সাম্যের হাতে খুন এ যুবক৷
তার দোষ??
হয়তো বা সে জোড় করে নিজের জায়গা বানাতে চেয়েছিল এ সমাজে৷ তার এ বেয়াদপি সমাজ কি মানতে পারে?...
ফলে শাস্তি পেতেই হলো তাকে৷
রেল লাইনে লুটিয়ে পরে থাকা গুলিবিদ্ধ যুবকটি একটা ছাত্র হতে পারে যাকে তার সমাজ মেনে নেয়নি তার জাতিগত কারনে,সে যে দলিতশ্রেণীর...নীচু জাত তার৷ সে কোনো মিছিলের মুখ হতে পারে যাকে সমাজ ছাড়েনি তার বিরুদ্ধে ঝান্ডা তোলার অপরাধে৷ সে কোনো ধর্ষিতার ভাই হতে পারত যাকে সমাজ বাঁচতে দেয়নি৷ আবার সে মৃত রহিত ভেমুলার ভাই হতে পারে যাকে হত্যা করতে সমাজের হাত কাঁপেনি একবারও৷ 
কুকুর শিয়ালে ছিঁড়ছে তার দেহটিকে, তার রক্তে পিপাসা মিটছে হিংস্রপ্রাণীদের ৷ আর তার মৃতুতে আবার স্বগর্ভে মাথা তুলে বাঁচছে এ সমাজ, আজ যে প্রতিবাদের হুংকার নেই৷
বিকেলের অস্তগামী সূর্যের আজ মাথানত এ সমাজের বর্বরতায়৷ অ্ল্প আলোতে ছেলেটির পাশে পরে থাকা ঝোলা থেকে উঁকি মাড়ছে একটি বইয়ের অংশ...
"Stride Toward Freedom"...

           
      

No comments:

Post a Comment