Syria

পিয়েরোর মোনালিসার দিক একদৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছি হঠাৎ ছবির নীচে লক্ষ্য করতেই কৌতূহল বাড়ল৷ ছবির নীচে হাত বোলাতেই হাতে রক্তের দাগ ৷ একটু অবাক হলাম ঠিকই তবে সামলে নিলাম নিজেকে৷ আসলে রক্তের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছি দিব্বি এই ৬ বছরে৷ ডামাস্কাসের গলিতে কত লোককেই না খুন করেছি আর তার সাথে গলা টিপে ধরেছি মনুষ্যত্বের৷ জীবন কখনোই আমার কাছে জীবন রূপে আসেনি, এসেছে লেনদেনের সম্পর্ক নিয়ে৷
পিছন ঘুরতেই নজর কাড়ল টেবিলে রাখা একটা কাটা হাত, যে হাত আমার কাছে মূল্যহীন বললেই চলে ৷ কিন্তু সেটা থেকে চুঁয়ে পরা রক্ত ঘরের মেঝেতে দল ভারি করেই চলেছে৷হাতটা ছুড়ে ফেলে দিতেই হলো, কিন্তু কিন্তু.....

চেয়ারে বসে চোখ বুজলাম , শান্তির খোঁজে বললেই চলে৷শরীরটা ভেঙে পরেছে গা ঢাকা দিতে দিতে৷ তবে বার বার মোনালিসার ছবির নীচের রক্তের দাগটা মাথায় টোকা মারছে৷ হঠাৎ একটা বাচ্চার গলা শুনলাম মনে হল৷
কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব?
উঠে দরজা খুলে বারান্দায় দাড়ালাম কিছুক্ষণ৷ বাইরেটা ঘুটঘুটে অন্ধকার , ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে তীব্রতার সাথে৷ সামনের বাগানে একটা ছোট্ট আলোর খোঁজ মিলল, আসতে আসতে সেটা আমার দিকেই ধেয়ে এলো৷
আমায় ঘিরে এক অদ্ভুত যুদ্ধের পরিবেশ, এপাশে সাদা কাপড়ে ঢাকা কিছু ছোট্ট প্রাণ যাদের দেহ কৈফিয়ত চেয়ে চলেছে আমার কাছে প্রতি নিয়ত৷ আমার হাঁটু ধরে বসে সেই মেয়েটি যার ছেঁড়া-ফাটা শরীরের প্রতি রক্তের ফোটায় মিচকে হেসে চলেছে আমার যৌনবিলাসিতা৷ সে প্রাণভিক্ষুক নয় , সে একটি মা৷৷
তবে যদি এটুকুতেই গলে যেতাম, তাহলে কি কখনো ওদের খুন করে নিজের জীবনতৃষ্ণা মেটাতে পারতাম? ওদের যে মরতেই হতো, মরতেই হতো ক্ষমতার হাতে৷ একটা ফুটফুটে বাচ্চা ছেলে আমার দিকে এগিয়েই চলেছে ক্রমশ৷ কিছুটা কাছে আসতেই চেহারাটা খুব চেনা লাগল৷ পাশের দেওয়ালেই তো ঝুলছে এই এক চেহারার একটা ছবি৷ কাছে এসে সে কেবল আমার হাত ধরে হাঁটতে লাগল৷ ডামাস্কাসের পুরোনো গলি পেরিয়েছি সবে, বুকের ভিতর কেমন ছ্যাঁক করে উঠল৷ চারিদিকে মাটি খুঁড়ে বেড়িয়ে এসেছে যে ওরা৷ কিন্তু ওরা যে আমার মত নয়, ওরা যে আমার সাথেই এগিয়ে চলেছে৷ একটা পার্কে দিব্বি লাফিয়ে বেড়াচ্ছে জীবনের ছোট্ট অণু-পরমাণু গুলো৷ পার্কে পা রাখতেই ওরা শান্ত, ওদের মুখ রক্তে ভরে উঠেছে , ওদের শিকার করেছি হয়তো আমিই প্রতি হামাগুড়ির পদক্ষেপে৷ রক্তাক্ত চেহারাগুলো দিয়েও হাসি বেড়িয়ে আসছে,ওরা বোঝেনি ,
ওরা বোঝেনি তাহলে যে আমি সফল আর ওরা হেরে গিয়েছে৷ কিন্তু....
নাহ এবার আবার অন্ধকার.....
চিরআধারের প্রবেশপথে সবে প্রথম পা রেখেছি....
সামনে মোনালিসার ছবির নীচে পরে আমার মৃতদেহ৷৷
কিন্তু কিন্তু আমিই জিতেছি৷৷
পাশের দেওয়ালের ছবির চেহারা বোধহয় আমার সাথেই মিলে যায়,তবে আজ থেকে ২৬ বছর আগের আমির সাথেই তার বেশী মিল৷

চিরকলঙ্কিত

অরণ্যের ডাকঘরে হরদম মৃত্যু সংবাদ বয়ে এনেছে,
কখনো ডাকটিকিটে হয়ে এসেছে ধর্ষিত নারীর কাপড়ের টুকরো,
কখনো মৃতদেহ মুড়ে এসেছে ধর্মের নষ্টামী,
আবার কখনো বসন্তের কাজল-লতা হয়ে এসেছো তুমি৷
ঋতুস্রাবের লাল আঁচড়ে কত মেঘবেলায় সতীত্বের পরীক্ষা দিয়ে চলেছো,
তোমার ধর্ম প্রতিনিয়ত তোমায় পঙ্গু করে চলেছে,
তবু লিখেছো তুমি,
                            লিখেছো আমাকে৷
উলগুলানের গান ধেয়ে এসেছে মৃত যাযাবরের রক্তাক্ত আস্তিন ছুঁয়ে,
তুমি বসন্তকে হারিয়েছো তোমার লিঙ্গছলের প্রতারণায়,
তুমি প্রতারিত প্রেমিকের দলে  আমাকে ঠেলে দিয়েছ  অবলীলায়,
আমার মৃত্যু তোমার খোলা চুলের অবৈধতাকে কাটিয়ে তুলবে,
কিন্তু কি বা অবৈধ?
তোমার শরীরের হাজার পুরুষের দাগ কেবলই যে অপেক্ষার বার্তা বয়ে এনেছে,
তোমার অপেক্ষা প্রতিরাতে হাজারো মাইল দূরে এক অচেনা আমির অস্থি জ্বালিয়েছে,
অপেক্ষায় আমিও ছিলাম তবে কেবলই অপেক্ষায়৷

তোমার কোন চিঠি আজও ঠিকানায় পৌঁছোয়নি,
তারা ভবঘুরে ডাকবাক্সের অন্ধকারে,
তবু আমি সবই পড়েছি,
পড়েছি মেঘ হয়ে যক্ষের অজান্তেই,
আমার প্রিয়া অলকাপুরীর অন্ধকারে বন্দী,
জানি প্রতারক আমি,
                       বসন্তের হাওয়া চিঠিগুলোকে গা মেলে ধরেছি
ইতিহাস তবু চিরকাল যক্ষের অপেক্ষায় কেঁদেছে,
তার কাছে তুমি অবহেলিত,
আর আমি?
চিরকলঙ্কিত৷৷