ইতি কালিদাস...

ধর্মের সৃষ্টির পূর্বে জন্ম আমার,তারপর হাঁটতে শেখা খ্রিস্ট যুগের বারান্দা হয়ে মোহাম্মদের হারেমে। হারেমে তখনও মহিলারা বন্দী,আজও তারা বন্দী রয়ে গিয়েছে। হঠাৎ সঙ্গ ছেড়ে চলে গেল যীশু,প্রতিবাদে জ্বলে উঠে আবার নিভে গেল প্রাচীন জনমহাসাগর। আসলে মানুষ ধর্ম,ভাব-ভালবাসা,সব কিছুর ঊর্ধ্বে। প্রাচীন সভ্যতা চিরকাল হেঁটে চলেছে জীবনের পথ ধরে। মৃত্যু এখানে মনে করেছে,মনে করায়েনি। ধর্ম কখনও যেমন জন্ম ঘটায়নি সেরকমই সে মৃত্যুর ফয়সালাও করেনি কখনও। ধর্ম কেবল বেঁচে থাকবার পথ দেখিয়েছে।

আজ ১৫০০ হাজার বছর পর,কিছুতেই মেনে নিতে পারিনা যে ধর্ম মানুষ মারছে, ধর্ম মানুষকে শিক্ষাহীন নিরেট পশু বানাচ্ছে। ধর্ম মানে আমার কাছে চিরকাল ছিল মিচেলেঞ্জেল, ধর্ম মানে আমার কাছে সেই লোকটা যার হাতে জন্ম হিরো-লিয়েন্দারের প্রেম কাহিনীর। ধর্ম মানে কখনও আমার কাছে মোহাম্মদ বা যীশু তো দূর, কৃষ্ণও হয়ে উঠতে পারেনি। টাইম মেশিনটা যদি থাকত...
ফিরে যেতাম...
কোথায়? কেন? যেখানে এখনও সত্যজিৎ রায় পথের পাঁচালির শুট করছে আর ঠিক তার পাশে গড়ে উঠছে রোমের কলোসিয়াম। কিছুটা দূরে থেকে কানে ভেসে আসবে বিথোভেনের সিম্ফনিগুলো আর কোন রাজ্য আবার পুড়ে যাবে তাদের রাজার ভায়োলিনের সুরে সুরে। আবার ধ্বংস-সৃষ্টি নিয়ে কাটাব কিছু কোটি বিচ্ছেদের শোক।
টাইম মেশিনে চড়ে তোমার কাছেও যেতাম একবার,তোমায় ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ দিতাম। জানো জীবনে তোমায় হারিয়ে কতটা দুঃখ পেয়েছি জানি না তবে, ৭০ সালের কলকাতা আরও বেশি দুঃখ দিয়েছে আমায়। প্রতি রাস্তায় পুড়েছে কত কার্ত্তিকের দেহ...
কার্ত্তিক কেন?
একটাই কারণ...
সেটা কেবল যুদ্ধ...
যুদ্ধ একটা পচে যাওয়া সমাজের থেকে বেরিয়ে এসে ভাববার। যুদ্ধ নিজের দেশের পথচলার দিক শুধরে দেওয়ার।
আমার কলমে জন্ম নেওয়া প্রতিটি শব্দ যেদিন থেকে কলেজ স্ট্রিটের প্রতিটি গলিতে গলা ধাক্কা খেয়ে প্রত্যাহৃত হল,সেদিন থেকে তারা বিদ্রোহে মেতেছিল। তারাও আবার ভিজে স্তব্দ হয়ে গেল বইমেলার আগুনে। আমার কলমে শেষ লেখা তোমার নামে একটা চিঠি যার ঠিকানা জানা নেই আমার... তবে শুধু বলতে পারবো খাম কেনবার পয়সা নেই,তাই খাম বানিয়েছি পাঞ্জাবীর বুক-পকেট। সুগন্ধ নেই তার একটিও পাতায়,আছে বলতে ঘামের গন্ধ আর এঁটো হাতের দাগ। আর চিরকাল ধরে জমে থাকা একটা প্রশ্ন...
বিদ্যোত্তমা, কেমন আছো?...”

-ইতি কালিদাস...

লেখাটার ওপর একবার চোখ বুলিয়ে সেটিকে আবার বুক পকেটে তুলে রাখল সে। প্রতি মুহূর্তে সে মৃত্যু বরণ করে চলেছে বিগত ১০ মাস ধরে । ডাক্তার তাকে জবাব দিয়ে দিয়েছেন...
হাতে মাত্র আর কিছুদিন...
তারপরই সমাপ্তি লেখা এই অনির্দিষ্ট দূরত্বের ভালবাসার...

সমাপ্তি বলতে বদলাবে শুধু একটা কথা...
সমাপ্তি বলতে লেখা থাকবে...
ভালো থেকো বনলতা।।..