“তোমাকে হারিয়েছি বেশীদিন
হয়নি,তবু কিছু যুগ পেরিয়েছে বলতে পারো।আমি
এখনও সেই মূর্খটি রয়ে গেছি, বদলেছে বলতে জীবনটা। রোদ ঝিলমিলে দুপুর গুলো এখন খবরের
কাগজ পড়ে কাটাই আর চায়ের কাপে চুমুক দিতেই পিঠে রোদ এসে উষ্ণ চুম্বন করে তোমায়
ফিরিয়ে দিয়ে যায়। তোমার কাছে চিঠি লিখতে বসেছি বহুবার, কিন্তু ওই ... রান্নার
লোকের খুন্তি নাড়বার আওয়াজ বার বার আমায় সংবিগ্ন করেছে। সকালের পাখির ডাক আমায়
কাঁদিয়ে তুলেছে কেবল সঙ্গিহারা হওয়ার শোকে।পাওনা বলতে কেবল সেই গোধূলি-বেলা, আকাশ
তখন যেন আমাদের বিচ্ছেদ শোককে প্রকৃতির আকার দিয়ে তোমার কথা মনে করিয়ে দেয়।
বয়সটা একটু বেড়েছে জানো, আর বেড়েছে তিক্ততা।পিপাসা কমেছে
অনেকটা তবু কোথাও একটা রক্তের পিপাসা রয়ে গিয়েছে। হ্যাঁ রক্তের...প্রতি রাতে এখন
স্বপ্ন আসে আমাদের সেই শেষ দেখা, আজ থেকে বোধ্যয় দু-যুগ আগে, তাই নয় কি? আজও
স্বর্গের কথা শুনলে মনটা লাফিয়ে ওঠে, মনে হয়, এই বুঝি বাড়ি ফেরার পালা।কিন্তু
পরোক্ষনেই মেনে নিতে হয় যে আমি বহিষ্কৃতদের দলেই আজও।জানো আমার দুঃখ নেই স্বর্গ
হারানোর , দুঃখ নেই কোন বিচ্ছেদের...তবে দুঃখ বলতে কেবল তোমাকে হারানোর।তোমায় আমি
যত বার কাছে পেয়েছি নারী রূপে, প্রতিবার দূরে সরিয়ে দিয়েছে আমাদের নিয়তি।এত
নিষ্ঠুর প্রেম-গাথা লেখে বলেই আজ সে ঈশ্বর।তিন যুগ পেরিয়ে আজ অনেকটা বুর হয়ে গেছি,
এটাই স্বাভাবিক।মৃত্যু ঘটেছে কত বার, কত রাত কেটেছে নির্জন দ্বীপে পথে প্রান্তরে।
একটু ক্লান্ত পড়ে পরেছি ঠিকই কিন্তু জানো আজও রক্তের খিদে মেটেনি, রক্তের খোঁজে
নিষ্ঠুর হয়েছি প্রতি মুহূর্তে, প্রতি পলকে। প্রতিটি নারীর বক্ষ চিরে তার রক্তাক্ত
হৃদয় স্পর্শ করলে আজ এক অদ্ভুত শান্তি যোগায়, যে শান্তি আমি পাইনি বহু হাজার বছর।
হত্যা খেলায় যখন আমার শরীরের তাপ একটা রক্তাক্ত যোনি ছোঁওয়া পায়, তখন আবার সব
শান্ত...... চারিদিক নিশ্চুপ।
এবার যাওয়ার
পালা, আবার কোন মৃত্যুপ্রহরে লিখব তোমার কাছে, পারলে কখনো ক্ষমা করো আমায়।আমি কোন
মানুষ হত্যা করিনি কখনো, আমি কেবল তাদের মুক্তির পথে ঠেলে দিয়েছি। মৃত্যুই যে
মুক্তি, আমার থেকে ভালো আর কেই বা বুঝবে, মৃত্যুর আঘাতে পিঠ ক্ষতবিক্ষত হলেও জীবন
কখনো আমার পিছন ছাড়েনি।
আমার যে মৃত্যু চাই, আমি আজ খুব ক্লান্ত হয়ে পরেছি এই
জীবনচক্রের বোঝে। দেখি এবার যদি মুক্তি পাওয়া যায় জীবনের হাত থেকে......
ভালো থেকো বনলতা...”
-ইতি তোমার কালিদাস।।
সামনে পড়ে একটি নগ্ন মেয়ের দেহ, সে এখনও প্রাণ হারায়নি,
তবে আর বেশী দেড়ি নেই। তার জামাকাপড় ছিঁড়ে তছনছ করে দিয়েছে এক অমানবিক পিশাচ।
কিন্তু আজ সে নিজেও মৃত্যু খেলায় মত্ত। মেয়েটির পাশে পড়ে থাকা একটা ধারালো ছুরি
দিয়ে সে নিজের হাতের শিরা কেটে চুপ করে ঘরের এক কোণে বসলো। তার চোখের সামনে ভেসে
উঠল তার এই জন্মের উদ্বেগ , তার চিঠি আদ্যতেও কি কখনো তার বনলতা পাবে?...... নাকি
এই জন্মটা তার বাকি জন্মের মতোই ব্যর্থ রয়ে যাবে। সে যে হত্যা করেছে কেবল চিঠি
পৌছনোর জন্যে ওই স্বর্গে, যেখানে সে আর কোনোদিনও যেতে পারবেনা। সে যে এই চিঠির মতো
আরও তিরিশটি চিঠি পাঠিয়েছে তার প্রিয়াকে, যে অলকাপুরীতে তার অপেক্ষায় যুগের পর যুগ
খাওয়া-ঘুম অবহেলা করে চলেছে। আর...মেঘ হয়ে আদ্যাও কি পারবে এই সামনে পড়ে থাকা
মেয়েটির আত্মা কখনো প্রিয়ার কাছে চিঠি পৌছতে?... দেওয়ালে ঝোলা যীশু ছল ছল চোখে তখনও তাকিয়ে...